নাগরিকত্বের ডিজিটাল দুয়ার খুলল: ২০২৪-এ সংশোধিত নিয়মে নাগরিকত্ব আবেদন আরও সহজ! 2024-এ সংশোধিত নিয়মে নাগরিকত্ব আবেদন আরও সহজ! Citizenship Amendment Act of 2024
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১১ মার্চ, ২০২৪ তারিখে একটি নতুন গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিধিমালা ২০২৪ (Citizenship Amendment Rules, 2024) প্রকাশ করেছে। এই বিধিমালায় নাগরিকত্ব আইনের (Citizenship Act, 1955) ধারা ৬-বি (Section 6B) অনুসারে নিবন্ধন ও ন্যাচারালাইজেশন প্রক্রিয়া ডিজিটাল ও স্বচ্ছ করতে নানা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
🔍 কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে?
- নতুন আবেদনপত্র ফরম (Form 2K – 8K) চালু হয়েছে, যেগুলি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত।আবেদন জমা দিতে হবে জেলা স্তরের Scrutiny Committee-র মাধ্যমে, যারা আবেদন যাচাই করে রিপোর্ট পাঠাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে সফল আবেদনকারীদের। প্রয়োজনে তারা কাগজের কপি চেয়ে নিতে পারবেন।
- আবেদনকারীদের অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে যে, ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পরে তারা পূর্ব নাগরিকত্বের দাবি আর করবেন না।
আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে –
- জন্মসনদ/পরিচয়পত্র,
- পাসপোর্ট,
- বাসস্থান প্রমাণ,
- পূর্ব নাগরিকত্ব প্রমাণ ইত্যাদি।
🧾 কারা আবেদন করতে পারবেন?
- যারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে এসেছে এবং হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিস্টান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
- যাঁদের মা-বাবা ভারতের নাগরিক, অথবা যাঁদের স্ত্রী/স্বামী ভারতীয় নাগরিক।
- অনাথ শিশু, যাঁর অভিভাবক ভারতীয় নাগরিক।
💡 কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ?
এই নিয়মাবলির মাধ্যমে ভারত সরকার নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, ডিজিটাল ও যাচাইকৃত করে তুলতে চায়। এটি সেইসব শরণার্থী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য একটি প্রত্যাশার আলো, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বাস করছেন কিন্তু নাগরিকত্ব পাননি।
এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়া অনেকটাই সরল, প্রযুক্তি নির্ভর এবং আইনানুগ হয়েছে। নাগরিকত্বের স্বপ্ন পূরণে এটি এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
প্রশ্নোত্তর – ২০২৪ সালের নতুন নাগরিকত্ব আবেদন নিয়ম
১. নাগরিকত্ব সংশোধনী বিধিমালা, ২০২৪ কী?
এটি ভারত সরকারের প্রকাশিত একটি নতুন বিধিমালা, যার মাধ্যমে নাগরিকত্ব আইনের ধারা ৬-বি অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করা হয়েছে।
২. কারা এই নিয়ম অনুযায়ী নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন?
যারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতে এসেছেন এবং হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি বা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী—তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।
৩. আবেদন প্রক্রিয়া কি এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল?
হ্যাঁ, আবেদন অনলাইনে করতে হবে এবং জেলা স্তরের স্ক্রুটিনি কমিটির মাধ্যমে যাচাই প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে।
৪. নতুন কোন ফর্মগুলো চালু হয়েছে?
২কে থেকে ৮কে পর্যন্ত নতুন ফর্ম চালু হয়েছে, যেগুলি ভিন্ন ভিন্ন আবেদনকারীর ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত (যেমন: শিশু, ভারতীয় নাগরিকের স্ত্রী, OCI হোল্ডার ইত্যাদি)।
৫. আবেদনের সঙ্গে কী কী ডকুমেন্ট দিতে হবে?
পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ, ভারতে প্রবেশের প্রমাণ, পাসপোর্ট/ভিসার কপি (যদি থাকে), ভাষাজ্ঞান ঘোষণাপত্র প্রভৃতি।
৬. আবেদনকারীদের কি শপথ নিতে হবে?
হ্যাঁ, প্রত্যেক আবেদনকারীকে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে হবে এবং তা নির্দিষ্ট আধিকারিকের সামনে গ্রহণ করতে হবে।
৭. আবেদন জমা দেওয়ার পর কী হবে?
জেলা স্তরের কমিটি সমস্ত তথ্য যাচাই করে কেন্দ্রীয় সরকারে পাঠাবে। অনুমোদিত হলে আবেদনকারীকে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
৮. শুধু ডিজিটাল সনদই কি দেওয়া হবে?
না, চাইলেই আবেদনকারী কাগজের সনদের জন্য অনুরোধ করতে পারেন। মূলত ডিজিটাল নাগরিকত্ব সনদ ইস্যু করা হবে।
৯. ভাষা সংক্রান্ত কোনো শর্ত আছে কি?
হ্যাঁ, আবেদনকারীকে ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে উল্লিখিত কোনো এক ভাষায় দক্ষতার ঘোষণা দিতে হবে।
১০. ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পরে কি অন্য দেশের নাগরিকত্ব রাখা যাবে?
না। নাগরিকত্ব অনুমোদনের পর আবেদনকারীকে তাঁর পূর্বের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হবে।
১১. আবেদন কোথায় জমা দিতে হবে?
আবেদন অনলাইনে নির্ধারিত পোর্টালের মাধ্যমে জমা দিয়ে, জেলার স্ক্রুটিনি কমিটির কাছে পাঠাতে হবে।
১২. কতদিনের মধ্যে নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত জানানো হবে?
নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা না করা হলেও, যাচাই ও প্রক্রিয়াকরণের পর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকার নেবে।
১৩. জেলা স্ক্রুটিনি কমিটি কারা চালায়?
জেলার একজন মনোনীত আধিকারিকের নেতৃত্বে এই কমিটি কাজ করে, যারা আবেদন যাচাই করে রিপোর্ট দেন।
১৪. যদি আবেদন বাতিল হয় তাহলে কী হবে?
যদি কোনো প্রমাণ বা শর্ত অপূর্ণ থাকে তবে আবেদন বাতিল হতে পারে, তবে সংশোধন করে পুনরায় আবেদন করা যেতে পারে।
১৫. আবেদন করার জন্য বয়সসীমা কী?
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্করাই আবেদন করতে পারেন, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে অভিভাবক/পিতামাতার মাধ্যমে আবেদন করা যায়।
১৬. আবেদনকারীর পিতামাতার নাগরিকত্ব গুরুত্বপূর্ণ কি?
হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে পিতামাতার নাগরিকত্বই আবেদনকারীর যোগ্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৭. ভারতে কত বছর থাকলে নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব?
কমপক্ষে ৬ বছর বসবাসের শর্ত, অথবা বিশেষ ক্ষেত্রে ১ বছরও যথেষ্ট হতে পারে ধারা ৬-বি অনুযায়ী।
১৮. কোন কোন দলিল আবশ্যক?
- জন্ম সনদ
- রেসিডেন্স প্রমাণ
- ধর্মীয় পরিচয়ের প্রমাণ
- পাসপোর্ট বা ভিসার অনুলিপি
- ভাষাজ্ঞান ঘোষণাপত্র
১৯. আবেদন জমা দেওয়ার পর স্ট্যাটাস কীভাবে জানবেন?
অনলাইন পোর্টালে লগ ইন করে আবেদন স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা যাবে।
২০. একই পরিবারের একাধিক সদস্য আবেদন করতে পারবে?
হ্যাঁ, পরিবারের প্রতিটি সদস্য আলাদা করে আবেদন করতে পারবেন।
২১. আবেদনের জন্য ফি আছে কি?
হ্যাঁ, নির্ধারিত আবেদন ফি রয়েছে। তা পোর্টালেই অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
২২. ভুল তথ্য দিলে কী হবে?
মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
২৩. আবেদন করার পর যদি কেউ দেশের বাইরে যান, প্রভাব পড়বে?
না, যদি ভারতে নির্ধারিত সময় ধরে বসবাসের প্রমাণ থাকে, তবে বিদেশ সফর সমস্যা নয়।
২৪. একবার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তা বাতিল হতে পারে কি?
হ্যাঁ, যদি পরবর্তীতে ভুল তথ্য বা অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে।
২৫. আবেদনপত্রে ভাষার ক্ষেত্রে কী শর্ত রয়েছে?
আবেদনপত্র অবশ্যই স্পষ্ট, নির্ভুল এবং সরকার-নির্ধারিত ভাষায় পূরণ করতে হবে।
২৬. ভারতের সংবিধান সম্পর্কে কোনো জ্ঞান থাকতে হবে কি?
হ্যাঁ, আবেদনকারীকে সংবিধানের প্রতি আনুগত্য ও আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়।
২৭. আবেদনে ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক কি?
হ্যাঁ, আবেদনপত্রে পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংযুক্ত করতে হয়।
২৮. অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলে আবেদন করা যাবে?
না। গুরুতর অপরাধমূলক রেকর্ড থাকলে নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
২৯. ভারতে জন্মগ্রহণ করলেই কি নাগরিকত্ব পাওয়া যায়?
না, কেবল জন্মের ভিত্তিতে নয়; অভিভাবকের নাগরিকত্ব ও অন্যান্য শর্তও প্রযোজ্য।
৩০. ভারতীয় নাগরিকত্ব কি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, বিশেষভাবে যদি পিতামাতা ভারতীয় নাগরিক হন তবে সন্তান নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে।
You May Like Also Also Like This
0 Comments